একটি সত্য ঘটনা 💀 আতঙ্কের আরেক নাম ভয় 💀☠ || 10% Beneficiaries @shy-fox
০৬-১০-২০২১
বুধবার
💖সবাইকে স্বাগতম💖
আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ভৌতিক ঘটনা শেয়ার করব, ভৌতিক কিনা সেটা আপনারা গল্পটি পড়ার পরেই বুঝতে পারবেন। তবে আমি বিশ্বাস করি ভূত বলতে কিছু নেই, সম্পূর্ণটাই আমাদের মনের একটি ভয় যা আতঙ্ক হিসাবে আমাদের গ্রাস করে ফেলে। চলুন কথা না বাড়িয়ে ঘটনাটি শুরু করি।
তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম এই অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে মাত্র উত্তীর্ণ হয়েছি। একদিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার পরে শুনতে পারলাম আমাদের ইংরেজি স্যার তিনি মারা গিয়েছেন। খবরটি শোনার পরে সত্যিই অনেক আফসোস হচ্ছিল এবং স্যারের জন্য অনেক খারাপ লাগছিল। তো আমাদের স্কুল থেকে একটা ঘোষণা করা হয় যে আমরা স্যারের বাসায় গিয়ে স্যারের দাফনের শরিক হবো। বুঝার সুবিধার্থে আগেই বলে রাখি, স্যারের বাসা বগুড়াতে ছিল এবং তখন নীলফামারী থেকে বগুড়া যাতায়াতের ব্যবস্থা অনেক করুণ ছিলো, প্রায় ছয় থেকে সাত ঘন্টা লেগে যেত। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে একটি বাসের ব্যবস্থা করা হয় এবং সবাইকে বলা হয়েছিল যারা যারা যেতে ইচ্ছুক তারা বাসায় জানিয়ে আমরা সাথে যেতে পারো। স্যারের সাথে প্রায় অনেকগুলো বছর একসাথে কাটিয়েছি, তার বিদায় বেলায় আমার যাওয়া উচিত। তাই আমি বাসায় জানিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আবার স্কুলে ফিরে বাসে বসে পরলাম। বাসে আমাদের শিক্ষকবৃন্দ এবং বড় ভাই এবং আমার ক্লাসমেট কিছু ছিল, সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জনের মতো হবে।
আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিকায় আমরা আমাদের স্কুল থেকে রওনা দেই, তবে দুঃখের বিষয় হল রংপুর যেতে যেতে আমাদের বাসটির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সে যান্ত্রিক ত্রুটিতে খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করতে পেরেছিল, মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে। আবার আমরা রওনা শুরু করি এবং স্যারের বাসায় যেতে যেতে প্রায় বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। বর্তমানের তুলনায় অতীতে রাস্তাঘাটের অবস্থা সত্যিই অনেক খারাপ ছিল, তাই যেতে এত বেশি সময় লেগেছিল। দাফন হওয়ার কথা ছিল দুপুর একটার সময় কিন্তু আমাদের জন্য তারা দাফনের সময় কাল পিছিয়ে দিয়েছিল। আমরা যাওয়ার পরে লাশটিকে দাফন করা হয়। সব ফর্মালিটিস পূরণ করতে করতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে যায়। আমাদের শিক্ষকবৃন্দ বলল এখন আমাদের যাওয়া উচিত, আনুমানিক সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকায় আমরা আবার বাসার দিকে রওনা দেই।
আমার আতঙ্ক টি এখান থেকেই শুরু হয় কারণ আমি ছোটবেলায় অনেক ভীতু ছিলাম এবং জানি না কত রাতে আমাকে তারা স্কুলে বা মেইন রাস্তায় নামিয়ে দিবে। অনেক কিছুই মাথায় চিন্তা হচ্ছিল যে আসলে কোথায় নামিয়ে দেবে এবং কোন রাস্তা দিয়ে আমি বাসায় যাব এবং তখন আমার কাছে মোবাইল ছিল না শুধুমাত্র একটি এমপিথ্রি প্লেয়ার এবং সাথে একটি হেডফোন ছিল। আমি চিন্তা করতে থাকলাম যদি আমি স্কুলে নামি তাহলে আমার বাসা এবং আমার স্কুলের মাঝখানে কবরস্থান পরে। সে রাস্তা দিয়ে এত রাতে আমার কখনোই যাওয়ার সাহস হয়ে উঠবে না। তাই আমি চিন্তা করলাম আমি মেইন রাস্তায় নেমে হেঁটে হেঁটে অন্য রাস্তা দিয়ে বাসায় যাবো। মেইন রাস্তার পাশেই আমাদের এক শিক্ষকের বাসা ছিলো। স্যারের সাথে কথা বলে আমরা দুজনেই মেইন রাস্তায় নেমে গেলাম। তবে আমার স্যার ছিল একটু হুজুর টাইপ, তিনি আমাকে কিছু উপদেশ দিলেন এবং একটি দোয়া শিখিয়ে দিলেন। তখন বাজে আনুমানিক রাত তিনটা।
অনেক কিছু উপদেশ দিয়েছিল তার মধ্যে এখন আমার একটি মনে আছে, আমাকে বলেছিল তোমার হাতের বাম সাইড দিয়ে কোন কুকুর যেন তোমাকে অতিক্রম না করে। যদিও তখন অনেক ছোট ছিলাম এই বিষয়গুলো বিশ্বাস করতাম। স্যারের বাসা থেকে আমাদের বাসার মাঝখানে একটি ভাঙ্গা ঘর পড়ে যা দেখতে সত্যিই অনেক ভয়ানক এবং রাত তিনটার সময় তখন রাস্তায় ইলেকট্রিসিটি বাতিও ছিল না। আমার আতঙ্ক এবং ভয় দুটি ক্রমশ বাড়তে থাকে, স্যার বাসায় মধ্যে চলে গিয়েছে সম্পূর্ণ রাস্তায় আমি সম্পুর্ন একা এবং অন্ধকার রাস্তা। আমি গুটি গুটি পায়ে একদম রাস্তার বাম সাইট দিয়ে হাঁটা শুরু করি। স্যারের বাসা থেকে আমার বাসা দ্রুত হেঁটে গেলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট লাগবে।
আমি দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম মাঝে মাঝে ইলেকট্রিসিটির পোলের মধ্যে লাইট জ্বলছিল, তবে অনেক কম আলো ছিল। আমি সেই ভাঙ্গা ঘরের দিকে ক্রমশ এগুতে থাকলাম। ইতিমধ্যে আমি লক্ষ করলাম আমার চারপাশে অনেকগুলো কুকুর হাঁটাহাঁটি করছে, আমার আতঙ্ক আরো বাড়তে থাকল। আমি যেন আমার মধ্যেই নাই। এই ভাঙ্গা ঘর সম্পর্কে যত বাজে বাজে কথা শুনেছিলাম সব একটার পর একটা মনে হতে শুরু করল। ইতিমধ্যে আমি হাটা বন্ধ করে দিয়েছি, একদম রাস্তার সাইডে আমি দাড়িয়ে রছেছি এবং সেই ছায়াটি ক্রমশ আমার দিকে এগুতে থাকলো। আমি কি করবো সত্যি বুঝতে পারছিলাম না, এতটা অস্থির এবং এতটা ভয় লাগছিল যা আমি কোন ভাবেই আপনাদেরকে লিখে প্রকাশ করতে পারব না। ছায়াটি আরো কাছে চলে আসলো এবং আমার নাম ধরে ডাক ছিল...! আমি একটু ভালোভাবে দেখলাম যে সেই আমার এলাকার এক বড় ভাই। এসেই আমাকে বলল, তুমি এত রাতে এখানে কি করছ??? চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি!! আমি সত্যিই অবাক! সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকলাম। আমি আরো বেশি অবাক হতে থাকলাম সে আমার কাছে অন্য কোন কিছু আর জিজ্ঞাসা না করে খুব দ্রুত সেই স্থান থেকে আমাকে বাসায় নিয়ে আসলো। পরবর্তী দিন সেই ভাই আমাকে ডেকে বলে পুরো ঘটনাটি বলার জন্য। আমি সবকিছু তাকে খুলে বললাম এবং সবশেষে তিনি একটাই উত্তর দিলেন, এত রাতে কখনোই আর ওই রাস্তা দিয়ে আসবে না।
ভুত বলে কোন কিছু আছে নাকি না সত্যি আমি জানিনা তবে একটি আতঙ্ক আছে!! যে আতঙ্কের ভয়ে আপনি ভীত হয়ে যে কোন কিছু করে ফেলতে পারেন, যে আতঙ্ক টা যে জয় করতে পারবে সেই হচ্ছে সাহসী মানুষ। আশা করি আমার এই গল্পটি আপনাদের ভাল লেগেছে। ভাল লাগলে অবশ্যই মন্তব্যে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: একটি সত্য ঘটনা 💀 আতঙ্কের আরেক নাম ভয় 💀☠
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
আমার পড়ে মনে হলো এটা নিছক আপনার মনের ভুল ছিলো।কারণ আপনি তখন এসব নিয়ে বা ভুত প্রেত নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করছিলেন,ভয় পাচ্ছিলেন।আর আপনার মন ই এই অবয়বটি তৈরি করেছে।
পড়ে ভালো লাগলো।ভীতুর ডিম🤪🤪😜😜
যদিও নিজেও সেইম😅😅
তখন অনেক ছোট ছিলাম এবং ভুত-প্রেত বিষয়গুলো অনেক ভয় লাগতো, এখন এতটা ভয় পাইনা..🤪🤪
অনেক সুন্দর করে লিখেছেন ভাইয়া।সত্যি আমিও বড়দের কাছে থেকে কুকুর, বিড়াল এর কথা শুনেছি। যদিও রাতে বের হতাম না তবে দাদি ভূতের গল্প বলতো। আগে নাকি ভূতেরা চাল ভাজা খেয়ে জমিতে পানি সেচ করত। আর আপনি রাত তিনটার দিকে একা গেছেন পড়েই আমার গা ছমছম করছে।
আমার দাদীর কাছে অনেক ভূতের গল্প শুনতাম কিন্তু সেগুলো কুসংস্কার ছিল নাকি এর পিছনে সত্যিই কোন কারন ছিল সেগুলো এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত করতে পারেনি।
ভাইয়া অসাধারণ হয়েছে আমরা অনেক ভালো লাগে ভুতের গল্প শুনতে। আমিও অনেক ভীতু তাও ভুতের গল্প শুনতে ভালো লাগে। আমার জীবনেও অনেক ঘটনা আছে মনে পড়লে শরীর এর লোম কাটা দিয়ে ওঠে।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
আপনার ঘটনা গুলো শুনতে ইচ্ছুক, আমাদের সাথে শেয়ার করবেন আশা করি।
জি ভাইয়া অবশ্যই শেয়ার করবো।