জ্যোতিবিজ্ঞানমূলক সিরিজ || প্লানেট নাইন বা প্লানেট এক্স
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনার সবাই অনেক ভালো আছেন। গত পর্বে আমি প্ল্যানেট নাইন সম্পর্কে বেসিক কিছু বিষয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আজ এই প্ল্যানেট নাইন খোজার ইতিহাস এবং বেশ কিছু থিওরি নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলব, তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি।
সালটা ছিল ১৯০১, তৎকালীন জ্যোতির্বিজ্ঞানে পার্সিভাল নোভেল যখন আকাশের দিকে মহাকাশে বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করছিলেন তখন তিনি অদ্ভুত একটি বিষয় লক্ষ্য করেন। সাধারণত আমাদের সৌরজগতের সকল গ্রহ নিজস্ব কক্ষপথে একদম স্থির ভাবে আর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। স্থির বলতে আমি কক্ষপথ কে বোঝাচ্ছি। কারণ এই কক্ষপথ পরিবর্তন হয় না সূর্যের গ্রাভিটিসিয়াল ফোর এর কারণে। কিন্তু তিনি পর্যবেক্ষণ করার সময় আর নেপচুন এবং ইউরেনাসের কক্ষপথে কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু বিষয় নোটিশ করল, অর্থাৎ তাদের কক্ষপথ একটু পরিবর্তন হয়ে গেল। যেহেতু আমাদের সূর্যকে কেন্দ্র করে এসে সকল গ্রহগুলো ঘুরছে তাই সেই সকল গ্রহের কক্ষপথ একটু পরিবর্তন করতে হলেও সূর্যের থেকেও বেশি গ্রাভিটিকাল ফোর্স এপ্লাই করতে হবে এবং এই বিষয়টি তিনি তখন লক্ষ্য করেছিল। তিনি এটা মনে করেন ঐসব গ্রহের ও আশেপাশে হয়তো আরো বড় কোন গ্রহ রয়েছে যার গ্রাভিটিকাল ফোর্সের কারণেই তাদের কক্ষপথগুলো পরিবর্তন হয়েছিল কিন্তু এর পরে তিনি বহু বছর এর পিছনে সময় ব্যয় করেন কিন্তু তারপরও এ ধরনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু তিনি যখন এই গবেষণাগুলো করছিলেন এবং যেই অবজেক্ট কিংবা গ্রহকে খুঁজছিলেন তার গ্রহের নাম দিয়েছিল প্লানেট এক্স। তখন থেকেই এই প্লানেট এক্স খোঁজার মিশন শুরু হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিষয় ১৯১৬ সালে তিনি তার ল্যাবরেটরীতেই মৃত্যুবরণ করেন। যদিও তার অঢেল সম্পত্তি ছিল এবং সেই সম্পত্তিতেই তার সেই গবেষণা চালিয়ে যায় এবং ১৯৩০ সালের দিকে একটি সাকসেস পাওয়া যায়। সেখানে মূলত প্লুটোকে আবিষ্কার করা হয় কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে প্ল্যানেট এক্সের যে রকম বর্ণনা ছিল সেরকম সেই প্লুটো ছিল না। কারণ প্লুটো ছিল একদম ছোট একটি গ্রহ অর্থাৎ আমাদের চাঁদের থেকেও ছোট এবং এই ছোট গ্রহ কখনোই ইউরেনাস এবং নেপচুর মত গ্রহগুলোর কক্ষপথ পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখেনা। তৎকালীন সময়ে আমাদের প্রযুক্তি এত অ্যাডভান্স ছিল না তাই আমরা সেই প্লুটোকেই প্লানেট এক্স মনে করে প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত করে দেই।
পরবর্তী সময়ে যখন অ্যাডভান্স টেলিস্কোপ আবিষ্কার হলো এবং প্লুটোর গঠন এবং আকার সম্পর্কে আমরা পর্যাপ্ত ধারণা পেলাম। তখন আমাদের মনে হলো বিজ্ঞানী পার্সিভাল নোভেল যেই গ্রহ কিংবা অবজেক্ট এর কথা বলেছিলেন সেটা এই প্লুটো গ্রহ নয়। এরপরে বিজ্ঞানী মহলে আবার একটি নতুন গবেষণা শুরু হল। তাহলে তিনি যে অবজারভেশন করেছিলেন সেটা কি ছিল? সেটা কি ধরনের অবজেক্ট ছিল এবং কতটা সামর্থ্য হলে সেই গ্রহ দুটিকে তার কক্ষপথ থেকে আলাদা করতে পারে? বিজ্ঞানীরা তৎকালীন সময় অনুযায়ী মনে করেছিল এই অবজেক্ট কিংবা গ্রহটি হয়তো পৃথিবী থেকে 50 গুণ বড় হতে পারে। এই গবেষণাটি এখন পর্যন্ত চলছে তবে এই গবেষণাকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের থিওরি দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে দুই একটি থিউরি আলোচনা করছি।
কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন এটা হয়তো একটি ডার্ক প্ল্যানেট অর্থাৎ যে প্লানেট একদম কুচকুচে কালো এবং যার মধ্য থেকে কোন প্রকারের আলো রিফ্লেক্ট হয় না এবং যতটুকু হয় ততটুকু অবজারভ করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। এছাড়াও এই গ্রহটি বা অবজেক্টি এত দূরে রয়েছে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েও সেটা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়।
আবার কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন এটা হয়তো একটি ছোট ব্লাক হোল যা এখন ইন একটিভ রয়েছে। আসলেই বিগ ব্যাং এর সময় অনেক ধরনের ছোটখাটো ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়েছিল এবং তারা কিভাবে তৈরি হয়েছিল সেই বিষয়ে বিজ্ঞানের এখন পর্যন্ত সঠিক কোন ধারণা দিতে পারেনি। সময়ের বিবর্তনে সে সকল ব্ল্যাক হোল গুলো হয়তো নষ্ট হয়ে গিয়েছে কিংবা বড় হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব থাকার কথা বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এবং বিজ্ঞানের ধারণা করেন এই ব্ল্যাক হোল যদি আমাদের সৌরজগতেই থেকে থাকে তাহলে সেটা একটি টেনিস বলের বেশি হবে না এবং যেহেতু এই ব্ল্যাক হোল ইন একটিভ রয়েছে তাই এই ব্ল্যাক হোল থেকেও আমাদের জন্য কোন ধরনের বিপদজনক অবস্থা সৃষ্টি হবে না।
আবার কিছু কিছু বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যখন বিজ্ঞানী নোভেল এই বিষয় গবেষণা করছিলেন তখন হয়তো ইউরেনাস এবং নেপচুনের আশেপাশ দিয়ে বড় কোন রোফ প্লানেট অতিবাহিত হচ্ছিল। রোফ প্লানের তাদেরকে বলা হয় যাদের কোন নির্দিষ্ট সৌরজগৎ নেই, তারা মহাকাশে অনন্তকালের জন্য এক দিক থেকে অন্য দিকে ছুটে বেড়ায়। অনেকটা এতিম বাচ্চার মত আপনারা ধারণা করতে পারেন।
এই ধরনের ছোটখাটো আরও অনেক থিওরি রয়েছে প্লানেট এক্স ঘিরে। তবে এই প্ল্যানেট এক্স যে আসলেই অস্তিত্বে আসবে কিনা সেটা তো সময়ের ব্যবধানে আমরা জানতে পারবো। তবে এই বিষয়টি আমার কাছে অনেকটাই রহস্যময় লেগেছে বিধায় আপনাদের কাছে আমি আমার নিজের ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আপনাদের কি মনে হয় আমাদের এই সৌরজগতেই কি কোন লুকায়িত গ্রহ রয়েছে? যেই গ্রহকে আমরা এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি। নাকি এই বিষয়গুলো শুধুমাত্র কাকতালীয়, যার ব্যাখ্যা হয়তো আমরা কোনদিনও পারবো না? আপনার মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন, ধন্যবাদ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: জ্যোতিবিজ্ঞানমূলক সিরিজ || প্লানেট নাইন বা প্লানেট এক্স
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
X-Promotion
অসাধারণ লাগলো তোমার লেখাটা। গবেষণামূলক আলোচনা প্ল্যানেট এক্স এর বিষয়ে। আমি এই সিরিজে তোমার আগের লেখাগুলো পড়িনি৷ তবে পড়ব। সুন্দর একটি বিষয় যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি বিশেষ দিক তুলে ধরলো। ভালো থেকো। লেখায় থেকো।
আজ থেকে দু তিন বছর আগে আমি বেশিরভাগ পোস্ট এই মহাকাশ বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়েই লিখতাম। তবে সবার মাঝে এই বিষয়ে আকর্ষণ কম থাকায় আস্তে আস্তে লেখা কমিয়ে দিয়েছি। তবে আবারো আমি এই সিরিজটি শুরু করেছি মহাবিশ্বের বিভিন্ন ধরনের রহস্য নিয়ে।
লিখে যাও৷ আমার খুব ভালো লেগেছে৷ আগ্রহ বাড়লো
ঠিক আছে ভাই, নিয়মিত লেখবো।
আমার তো মনে হয় সৌরজগতে লুকায়িত গ্রহ অবশ্যই রয়েছে। হয়তো পরবর্তীতে আরও অ্যাডভান্স টেলিস্কোপ আবিষ্কার করা হলে কিংবা টেকনোলজি আরও উন্নত হলে, আমরা লুকায়িত গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। যাইহোক প্লুটোর ভাগ্য তো দেখছি অনেক ভালো😂। এতো ছোট একটি গ্রহ হওয়া সত্ত্বেও, প্লুটোকেই আমরা প্লানেট এক্স মনে করেছিলাম প্রায় ৫০ বছর। অর্থাৎ অ্যাডভান্স টেলিস্কোপ আবিষ্কার করার আগ পর্যন্ত আমরা এটাই ভেবেছিলাম। যাইহোক পোস্টটি পড়ে প্লানেট এক্স সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা পেলাম ভাই। এমন তথ্যমূলক একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
প্লুটের জন্য মাঝে মাঝে অনেক খারাপ লাগে, প্রথমে তো প্লানেট এক্স এর মর্যাদা হারায় পরবর্তীতে গ্রহ হওয়ার মর্যাদাও হারিয়ে ফেলে।
আসলেই ভাই ব্যাপারটা খারাপ লাগার মতোই। তবুও দিনশেষে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
হ্যা ভাই, তবে এগুলো জানার মাঝে ও আনন্দ আছে।
ঠিক বলেছেন ভাই, নতুন কিছু জানতে পারলে মনের মধ্যে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।