---

কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার রংপুরে তাজহাট জমিদারবাড়ি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলবো। আমরা গত সেপ্টেম্বরের শেষেরদিকে রংপুর বিভাগ ঘুরতে গিয়েছিলাম যখন, সেইসময়কার কাহিনীর একটা ছোট অংশ বলতে পারেন এটাকে।

আমরা বেশ সকাল সকাল-ই রংপুর শহরে পৌছে গিয়েছিলাম, তার অন্যতম মূল একটি কারণ হচ্ছে আমরা ঢাকা থেকে একদম ভোরে রওনা হয়েছিলাম। আমরা নিজেদের গাড়ির মাধ্যমেই যাই, যার ফলে আমরা সকালের সেই অপূর্ণ ঘুমটুকু গাড়িতেই ঘুমিয়ে নেয়ার একটা সুযোগ পেয়েছিলাম, আর বলাই বাহুল্য, আমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা রংপুর শহরে পৌছানোর সময় বাজে সকাল ৯ টা। তো তখন আমরা তাজহাট জমিদারবাড়ি যাওয়ার পথেই মূল রাস্তার পাশে একটি ছোট হোটেল থেকে সকালের নাস্তাটা সেরে নিই। উত্তরাঞ্চলে আবহাওয়া বেশ অদ্ভুত ধরণের, সেখানে দিনে আপনি গরমে থাকতে পারবেন না, কিন্তু রাতে আর আর ভোর বা সকালবেলা আপনি অনেক ঠান্ডা অনুভব করবেন। শীত ঋতু না হওয়া সত্ত্বেও এজন্যে আমরা শীতের সকালে গরম গরম পরটা খাওয়ার মজাটা নিতে পেরেছিলাম। নাস্তা শেষে আমরা শহরের মধ্যে গাড়িতে করে একটু ঘোরাঘুরি করে চলে যাই আমাদের মূল আকর্ষণ তাজহাট জমিদারবাড়ি দেখতে।

আগে তাজহাট জমিদারবাড়ি সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছু তথ্য জানিয়ে রাখি। তাজহাট জমিদারবাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক-প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ও একটি পর্যটক-মুখর স্থান। এটি নির্মিত হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, আর তা নির্মাণ করেন মহারাজা গোপাল রায়। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার, আর তার তৈরি তাজ বা মুকুট ছিলো ব্যাপক সমাদৃত। তার এই তাজ থেকেই “তাজহাট” নামের উৎপত্তি। প্রাসাদটি ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত রংপুর হাইকোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে।

আমরা তাজহাটে পৌছাই সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে। ভরদুপুরের রোদে প্রাসাদটিকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিলো। মূল জমিদারবাড়ি এলাকাটা বেশ বড় ছিলো, আর আমাদের মূল প্রাসাদে আসতেই গাড়িতে ৫ মিনিটের মতো লেগে যায়। প্রাসাদের সামনে একটি বড় ফোয়ারা আছে, তবে তা এখন আর চালানো হয় না বা চালানোর উপায় নেই। প্রাসাদটি দোতলা। নিচতলায় বিরাট কিছু ঘর, দোতলায় একটি জাদুঘর, যেখানে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও তাজহাটের সাথে সম্পর্কিত নিদর্শন সাজিয়ে রাখা আছে। সেখানে বেশ কিছু পুঁথি দেখলাম আমরা, এছাড়া বেশ কিছু বিগ্রহ ও পোড়ামাটির শিল্পকর্ম ছিলো সেখানে। এগুলোর পাশাপাশি সেখানে বেশ কিছু মধ্যযুগীয় নিদর্শনও ছিল, যা দেখে আমরা বেশ অবাক হয়েছি। কিছু ঘর সিলগালা করে রাখা ছিলো, তবে আমরা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখেছিলাম যে ভেতরে আরো সুন্দর ও আকারে অনেক বড় বেশ কিছু বিগ্রহ ও প্রতিমা রয়েছে। আমরা যতদূর বুঝতে পেরেছি, এগুলোর ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্যের কারণেই হয়তো এগুলোকে প্রদর্শনীতে রাখা হয় নি।

তাজহাট প্রাসাদের অন্দর আমাদের সবারই নজর কেড়েছে। প্রত্যেকটা ঘরের ছাদ কম করে হলেও ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু হবে, আর দরজাও সেরকমই লম্বা। আমরা বেশ কিছু সিঁড়ি দেখেছি, যার সবগুলোই নজরকাড়া নকশায় তৈরি করা। প্রাসাদের পেছনের দিকে একটি গুপ্ত সিঁড়ি আছে, যা ঘাঘট নদীর সাথে যুক্ত ছিলো বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। প্রাসাদটি রাজা গোপাল রায় মোঘল স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি করেছিলেন, তা স্থাপত্যকর্মের নমুনা থেকেই স্পষ্ট। এই স্থাপত্যশৈলী তাজহাটের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে।

সবমিলিয়ে আমার তাজহাট জমিদারবাড়িতে আমাদের ভ্রমণটা অনেক ভালো লেগেছে, আমি এই প্রাচীন স্থাপত্য ও ইতিহাস অনেক উপভোগ করেছি। আপনারাও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন, এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটালে আপনাদের যে ভালো সময় কাটবে তার নিশ্চয়তাটা আমি সহজেই দিতে পারি।

বিষয়	নাম
ক্যামেরা	Realme Narzo 20
স্থান	তাজহাট জমিদারবাড়ি

---

ধন্যবাদ

_{Posted using SteemPro Mobile}