কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।
আজকে আমরা ‘জাওয়ান’ সিনেমাটি নিয়ে কথা বলবো। এই মুভিটি ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বলিউড অ্যাকশন থ্রিলার ফিল্ম, যার পরিচালনা করেছেন অ্যাটলি। এই সিনেমাটির প্রযোজনা করেছেন রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট এর ব্যানারে গৌরি খান ও গৌরব ভার্মা।

মূল কাহিনীঃ
আজাদ হলো একজন মহিলা জেলের জেলর, যে তার কারাগারের কিছু মেয়েদেরকে নিয়ে একটি মেট্রো হাইজ্যাক করে। এই হাইজ্যাকিং-এর সময় সে এনএসজি এর অফিসার নর্মদা রাই এর সাথে ৪০ হাজার কোটি রুপি মুক্তিপণ দাবি করে এই সকলের প্রাণের বিনিময়ে। কালী গাইকওয়াদ, একজন অস্ত্রবিক্রেতা, জানতে পারে যে তার মেয়ে এই মেট্রোতে আটোক আছে, আর সে নিজে পুরো টাকাটা দিয়ে দিতে রাজি হয়। এরপর আজাদ সেই টাকাটা দিয়ে সাত লক্ষ দরিদ্র কৃষকের ঋণের দেনা পরিশোধ করে দেয়, আর সে কালীর মেয়ের মাধ্যমে কালীকে জানায় যে তার নাম বিক্রম রাথোর।

_{স্ক্রীনশট:- HQflix}

ঘটনাক্রমে আজাদের সাথে নর্মদা ও তার মেয়ে সূচির পরিচয় হয়, আর তাদের মধ্যে সূচির কারণেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আর তারা বিয়ে করতে একমত হয়। আজাদ ও তার দল এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপহরণ করে এবং তার মুক্তিপণ হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসামগ্রী মজুত করতে বলে। তার দাবি পূরণ করা হলে তারা পালাতে যাবার সময় নর্মদার (যে জানে না যে এই “বিক্রম রাথোর” আসলে আজাদ) সশস্ত্র বাহিনী তাদেরকে আক্রমণ করে। তারা পালাতে সক্ষম হয়, কিন্তু আজাদের মুখোশটা নর্মদার কাছে চলে আসে। নর্মদা মুখোশটা ল্যাবে পাঠিয়ে নিজে বিয়ের পিঁড়িতে বসে। বিয়ের পর নর্মদা জানতে পারে যে আজাদই আসল এবিক্রম, কিন্তু তখন কালীর ভাই মনীষ তাদেরকে অপহরণ করে আর তাদেরকে নির্যাতন করে। তখন আজাদকে উদ্ধার করে তারই মতো দেখতে “বিক্রম রাথোর”। এরপর নর্মদা নিজে জেলে গিয়ে আজাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারে।

_{স্ক্রীনশট:- HQflix}

১৯৮৬ সালে বিক্রম রাথোর ছিলেন একজন কমান্ডো, আর একটি মিশনে অস্ত্রের সমস্যার কারণে বহু সৈন্য মারা যান। বিক্রম ও তার দল কালীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করে এজন্যে। সেদিন রাতে কালীর দল বিক্রম ও তার স্ত্রীকে আক্রমণ করে, তাদেরকে আলাদা করে, ও বিক্রমকে বিমান থেকে গুলি করে নিচে ফেলে দেয়। বিক্রমের স্ত্রী ঐশ্বরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় কারণ জোরপূর্বকভাবে তার সই আদায়ের চেষ্টা করার সময় তাকে শারীরিকভাবে তার সম্মানহানি করার চেষ্টার সময় সে কালীর তিন চেলাকে গুলি করে হত্যা করে। বিক্রমকে সারাদেশে এক বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়। ঐশ্বরিয়া জেলে বসে আজাদকে জন্ম দেয়, আর আজাদের পঞ্চম জন্মদিনে ঐশ্বরিয়াকে ফাঁসি দেওয়া হয়। আর অপরদিকে বিক্রমকে ফেলে দেবার পর তাকে খুঁজে পায় উত্তর-পূর্ব ভারতের একদল মানুষ যারা তাকে সুস্থ করে তোলে।
বর্তমানে, নর্মদার সহকারী ইরানি জানায় যে সে আসলে কালীর জন্যে কাজ করছিলো, আর এসময় সে নর্মদা ও আজাদের দলের মেয়েদেরকে হত্যার চেষ্টা করে, যাদের মধ্যে লক্ষ্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আরা যায়। আজাদ ইরানিকে হত্যা করে তার বাবা, তার দল ও তার বাবার বন্ধুদের সাথে কালীর ট্রাক চুরি করে। সেই ট্রাকভরা ছিলো টাকা, যা ব্যবহার করে পরবর্তী নির্বাচনে কালীর নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা হবে। বিক্রমকে কালীর দল অপহরণ করে নির্যাতন করে, আর এই সময় আজাদ আরেকটি ভিডিওতে জানায় যে সে ভোটিং মেশিন চুরি করেছে, আর সে এই মেশিনগুলোর বদলে ২৫৩ টি কারখানা সিল্গালা করতে বলে যেগুলোর ফলে বায়ু ও পানি অত্যধিক হার এ দূষিত হচ্ছে। সরকার ঐ কারখানাগুলোকে সিল্গালা করে দেয়। কালী হাজির হয়, আর একটি লড়াই শুরু হয়। বিক্রম আর আজাদ একসাথে লড়ে কালীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাকে হত্যা করে। কিছুদিন পর, এসটিএফ অফিসার মাধবন নাইক, যিনি আজাদকে তার সমস্ত মিশনে সাহায্য করেছিলেন, তাকে সুইস ব্যাংক নিয়ে আরেকটি মিশনের দায়িত্ব প্রদান করেন।

ব্যক্তিগত মতামতঃ
এই মুভিটি সত্যি বলতে আমার অসাধারণ লেগেছে। প্রথমেই আসি গল্পে। বিগত কিছু বছরের সেরা গল্প ও চিত্রনাট্যের একটি ছিলো এই মুভিতে। গল্পে প্রত্যেকটা চরিত্রের প্রত্যেকটা কাজের পেছনেই ছিলো যথাযথ কারণ, যা গল্পের মাধ্যমে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আজাদ, বিক্রম, নর্মদা, ঐশ্বরিয়া- চরিত্রগুলোর মূল কাহিনী ছিলো এক অনন্য মাত্রায় ভালো। এরপর আসা যাক অভিনয়। শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের সেরা অ্যাকশন মুভিগুলোর মধ্যে একটি ছিলো এই মুভিটি। তবে এই মুভিটি শুধু অ্যাকশন মুভি না, মুভিতে হাসি ছিলো, কান্না ছিলো, প্রাণ ছিলো। নয়নতারা নর্মদা রাই চরিত্রে নিয়ে এসেছেন সাবলীলতা ও আবেগ। তবে অভিনয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব সম্ভবত ফেলেছেন দীপিকা পাড়ুকোন, যিনি ঐশ্বরিয়া চরিত্রে অতিথি চরিত্র হিসেবে অভিনয় করেও মাত্র কয়েক মিনিটের কিছু দৃশ্যে অভিনয় করে সকলের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তার অভিনয় দেখে একপর্যায়ে আমি কেঁদে দিয়েছিলাম, এটা এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলো।
এরপরেই আসি গান ও সিজিআই এর ক্ষেত্রে। প্রত্যেকটা গানই ছিলো অনেক সুন্দর। “চালেয়া” গানটির কথা ও সূর ছিলো অনেক আকর্ষণীয়, আর সেজন্যেই গানটা এতোটা হিট হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক মুহুর্তে অনেকগুলো গান ও আবহসঙ্গীত ছিলো যা আমার মন জয় করে নিয়েছে। এই মুভির সিজিআই অনেক হলিউড মুভির থেকেও বেশি ভালো ছিলো, আর আগে থেকে না জানলে থাকলে আমি হয়তো ওই দৃশ্যগুলোকে সত্যি বলেই ভেবে নিতাম। আর এই মুভির বার্তাও ছিলো চমৎকার ও বাস্তবনির্ভর।
সবমিলিয়ে, এই মুভিটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি আপনারাও এটা উপভোগ করবেন।

---

বিষয়	নাম
মুভির নাম	জাওয়ান
পরিচালক	অ্যাটলি।
লেখক	অ্যাটলি।
শ্রেষ্ঠাংশে	শাহরুখ খান, নয়নতারা, বিজয় সেন্থুপাঠি, দীপিকা পাড়ুকোন, সঞ্জয় দত্ত প্রমূখ।
মুক্তির তারিখ	৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
স্ট্রিমিং সার্ভিস	নেটফ্লিক্স।
মূল ভাষা	হিন্দী।
কান্ট্রি অফ অরিজিন	ভারত।

আশা করি আমার এই রিভিউটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমি এই বিষয়ে এখনও অভিজ্ঞ নই, অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন ভুল করে থাকলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
--------- | ---------

---

যদি আপনাদের আমার পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।

---

💗ধন্যবাদ💗