---

কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আপনারা সকলেই ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন।আজকে আমরা কথা বলবো মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স এর স্পাইডারম্যান ট্রিলজির তৃতীয় মুভিটি নিয়ে, যার নাম স্পাইডারম্যান: নো ওয়ে হোম।

_{সংগ্রহশালা}

---

বিষয়	নাম
সিনেমার নাম	স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম
পরিচালক	জন ওয়াটস
শ্রেষ্ঠাংশে	টম হল্যান্ড, জেনডায়া, বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, জেকব বাটালন, জেমি ফক্স, উইলেম ডাফৌ, আলফ্রেড মোলিনা, মারিসা টোমেই, অ্যান্ড্রু গারফিল্ড, টোবি ম্যাগুইয়ার
মুক্তির তারিখ	১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ( যুক্তরাষ্ট্র)
সময়	১৪৮ মিনিট
মূল ভাষা	ইংরেজি
কান্ট্রি অফ অরিজিন	যুক্তরাষ্ট্র

মূল কাহিনী

এই সিরিজের আগের মুভি স্পাইডারম্যান হোম ফ্রম হোম এর শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছে যে মিস্টিরিও সবার সামনে স্পাইডারম্যানের আসল পরিচয় উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং স্পাইডারম্যানের ওপর মিস্টিরিওকে হত্যার অপবাদ চাপানো হয়েছে। এই সিনেমাটি ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। সিনেমার শুরুতে আমরা দেখতে পাই যে স্পাইডারম্যান যে আসলে পিটার পার্কার এটা সাধারণ মানুষজন জেনে গেছে এবং পিটার কে একজন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এতে শুধু পিটার এর জীবন না, তার বন্ধু, মাসী থেকে চেনা পরিচিত সবার জীবনে না ঝামেলা দেখা দিচ্ছে। সবশেষে দেখা যায় শুধুমাত্র পিটারের সাথে জড়িত থাকার কারণে পিটার তার বন্ধু এমজে এবং নেড লিডস কে এমাইটি থেকে রিজেকশন লেটার পাঠানো হয়। এর ফলে পিটার বুঝতে পারে যে তার এই স্পাইডারম্যান পরিচয়ের কারণে আসলে তার সবচেয়ে কাছের মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পিটার কখনোই চায় নি যে তার জন্য তার প্রিয়জনদের ক্ষতি হোক। পিটার এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাই জায় ডক্টর স্ট্রেঞ্জ এর কাছে। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ একজন জাদুকর, পিটার তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলার পর তিনি পিটারকে সাহায্য করতে রাজি হন। তিনি এমনভাবে জাদু করেন যাতে বিশ্বে সবাই ভুলে যাবে যে পিটার পার্কার আসলে স্পাইডারম্যান, কিন্তু পিটার বারবার তার জাদুর মধ্যে বাধা দিতে শুরু করে, ফলে মন্ত্রটি বিগড়ে যায়, এবং পুরো মাল্টিভার্স এর মধ্যে যে অসীম সংখ্যক মানুশ পিটার এর আসল পরিচয় জানে, তারা সবাই একের পর এক এই ইউনিভার্সে আসা শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে টোবি ম্যাগুয়্যার ও অ্যান্ড্রু গারফিল্ড অভিনীত স্পাইডারম্যান মুভিগুলোর ভিলেন, ডক অক, গ্রিন গবলিন, স্যান্ডম্যান, ইলেক্ট্রো, লিজার্ড। পিটার ডক্টর স্ট্রেঞ্জ এর কথামত তাদেরকে ধরে আনে৷ কিন্তু এক পর্যায়ে সে বুঝতে পারে, তারা সবাই এই ইউনিভার্সে এসেছে তাদের মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে, অর্থাৎ তাদেরকে নিজেদের ইউনিভার্সে পাঠানো হলে তাদের মৃত্যু অনিবার্য। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ চেয়েছিলেন তাদের সবাইকে নিজ ইউনিভার্সে পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু পিটার সবাইকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পাঠিয়ে দিতে রাজি হয় না। এমজে, নেড ও পিটারের মাসী আন্ট মে পিটারকে এই কাজে সাহায্য করতে রাজি হয়। পিটার সব ভিলেনদের সাথে মিলে ডক অক কে সুস্থ করতে সক্ষমও হয়, কিন্তু বাকিরা এতে বাদ সাধে। পিটারকে ও তার নিকটজনদের সবাইকে ভিলেনরা একসাথে অ্যামবুশ করে, সবার একান্ত চেষ্টা ও বোঝানোর পরও গ্রিন গবলিন আন্ট মে কে তার গ্লাইডার দিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে ফেলে। মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে আন্ট মে বলেন যে “উইদ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপনসেবলিটি”, এরপর পিটারের সামনে তিনি মারা যান। পিটার তার মৃত্যু এবং জনগণের তার বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

---

অন্যদিকে, পিটারকে খুঁজতে গিয়ে এমজে ও নেড, টোবি ও অ্যান্ড্রুর পিটার পার্কারের সাথে পরিচিত হয়, এবং তারা সকলে মিলে টম এর পিটার পার্কারকে সান্ত্বনা দেয়। টোবির পিটার (পিটার ২) আংকেল বেন এর মৃত্যুর কথা বলে, এবং অ্যান্ড্রুর পিটার (পিটার ৩) নিজের গার্লফ্রেন্ড গোয়েন স্টেসির কথা বলে, যাকে পিটার ৩ তার মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। পিটার ২ ও ৩ এর কথা শুনে টমের পিটার অর্থাৎ পিটার ১ ভিলেনদের কে সাহায্য করতে আবারো রাজি হয়, কিন্তু মনে মনে সে ঠিকই নিজের প্রতিশোধ নিতে চায়৷ তিন পিটার মিলে সব ভিলেনদেরকে সুস্থ করার প্রতিকার তৈরি করতে সক্ষম হয়।
মুভি শেষে দেখা যায়, সব ভিলেন ও আমাদের হিরোরা স্ট্যাচু অব লিবার্টির সামনে লড়ে, এবং গ্রিন গবলিন বাদে সবাইকে তারা সুস্থ করতে সক্ষম হয়। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ সবাইকে নিজ ইউনিভার্সে পাঠানোর জন্য আরেকবার চেষ্টা করেন, কিন্তু গ্রিন গবলিন এসে পুরো প্ল্যানে জল ঢেলে দেয়। একটা বোমা বিস্ফোরিত করে পুরো মন্ত্র আবার পাল্টে যায়। ফলে সব ইউনিভার্সের সব স্পাইডারম্যান ভিলেনরা একের পর এক আসতে শুরু করে। অন্যদিকে পিটার ২ এমজে কে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। পিটার ১ আন্ট মে এর মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে গ্রিন গবলিন কে মারতে চায়, কিন্তু ২ জন পিটার এ তাকে বাধা দেয়। পিটার নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং গ্রিন গবলিন কে সুস্থ করে। শেষে পিটার স্ট্রেঞ্জ কে জিজ্ঞেস করে যে যদি সবাই পিটার পার্কার কে ভুলে যায়, তবে পুরো ইউনিভার্স কে রক্ষা করা যাবে কি না, স্ট্রেঞ্জ উত্তরে হ্যাঁ বলে। তখন পিটার নিজের সবকিছু ত্যাগ করে পুরো ইউনিভার্স কে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্ট্রেঞ্জ সারা বিশ্বের সব মানুষের স্মৃতি থেকে পিটার পার্কার কে মুছে দেয়, তার আগে পিটার বাকি সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় এবং অন্য পিটার ও ভিলেনরা নিজ ইউনিভার্সে চলে যায়। পিটার এমজে কে কথা ডেকে সে আবার ফিরবে, এবং তারা সবাই পিটারকে ভুলে যায়।
কিছুদিন পর, পিটার এমজে কে নিজের সম্পর্কে বলতে আসে, কিন্তু এমজে কে নিরাপদে রাখার জন্য সে আর এমজের কাছে ফিরে এসে না। পিটার পার্কারকে বিশ্বের কেউ চেনে না, চেনে শুধু স্পাইডারম্যানকে।

ব্যক্তিগত মতামত

মুভিটির প্রথমভাগ সামান্য দুর্বল ছিল, কিন্তু বাকিসব ছিল চমৎকার। অভিনয়, চিত্রনাট্য থেকে গ্রাফিক্স পর্যন্ত সো ছিল অসাধারণ। আগের স্পাইডারম্যান ক্যামিওগুলো শুধু দেখানোর জন্য ছিল না, নিজেদের মুহূর্ত তারা সবাই পেয়েছিল। টম হল্যান্ড, অ্যান্ড্রু গারফিল্ড এবং উইলেম ডাফো এর অভিনয় আমার কাছে তাদের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মনে হয়েছে। পিটারের ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট ছিল দেখার মত। ইমোশনাল মুহূর্তগুলোও কৌতুক দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয় নি। সবমিলিয়ে, শুধু একটা ভালো স্পাইডারম্যান মুভিই নয়, এটা মার্ভেল স্টুডিওর অন্যতম সেরা একটা সিনেমা।

---

ধন্যবাদ

_{Posted using SteemPro Mobile}