---

কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমি আবারো হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে আমার আরেকটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে। এবারের গন্তব্য হলো দিনাজপুরের কান্তজীয় মন্দির। বুঝতেই পেরেছেন, এটাও আমাদের রংপুর বিভাগ ঘুরে আসার সময়কার-ই একটি ঘটনা।

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৩
স্থান:- কান্তজীয় মন্দির, দিনাজপুর
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

কান্তজীয় মন্দির হলো বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত মধ্যযুগীয় একটি মন্দির, যা নির্মিত হয়েছিলো শ্রীকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী রুক্মিণী-কে উৎসর্গ করে। ১৭ শতকে এই মন্দিরটি নির্মাণ করার সময় এই মন্দিরের চূড়ায় “নবরত্ন” বা নয় শিখর ছিলো, তবে ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে এগুলো ভেঙে যায়। পরে রাজা গিরিজানাথ এর আমলে ব্যাপক সংস্কার হলেও এই চূড়াগুলো আর পুনর্নির্মিত হয় নি।

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৩
স্থান:- কান্তজীয় মন্দির, দিনাজপুর
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৩
স্থান:- কান্তজীয় মন্দির, দিনাজপুর
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

কান্তজীয় মন্দিরের অবস্থান দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে ও টাহারোল উপজেলা থেকে সাত কিলোমিটার দুরত্বে দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পাশে সুন্দরপুর ইউনিয়নে। মূল সড়ক থেকে একটু হেঁটে ভেতরে যেতে হয়। আমরা সকাল ১০ টার দিকে এখানে এসে পৌছাই। ভেতরে যেতে যেতে শুনলাম যে আগে মূল সড়কের পাশেই মন্দিরটি ছিলো, এখন মন্দিরের পাশ থেকে রাস্তাটি একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। মন্দিরের চারিদিকে অনেকটা আশ্রমের মতো টিনের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতে ঢুকতেই কানে আসলো মধুর কীর্তনসঙ্গীত। মূল মন্দির থেকে একটু দূরে অনেকেই একসাথে কীর্তন গাইছিলেন, আমরা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ শুনলাম, বেশ ভালো লাগলো। এরপর আমরা মূল মন্দিরটি দেখতে গেলাম।

_{ছবিটি তোলার তারিখ :- ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৩
স্থান:- কান্তজীয় মন্দির, দিনাজপুর
ডিভাইস :- Realme Narzo 20}

কান্তজীয় মন্দিরের কথা যেমন বইয়ে পড়েছিলাম, ঠিক তেমনি সেটা বাস্তবে দেখতে। বিশাল একটি স্থাপনা, চারিদিকের দেয়ালে পোড়ামাটি বা টেরাকোটায় রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা। সমগ্র বাংলাদেশে বহু স্থানেই টেরাকোটার স্থাপত্য দেখা গিয়েছে, তবে তার মধ্যে সম্ভবত এখানেই আমি সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা দেখতে পায়েছি। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্যে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করা ও মন্দির-বেদিতে ওঠা নিষিদ্ধ, তাই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও মন্দিরের বেতরে যাওয়া সম্ভব হয় নি। মন্দির প্রাঙ্গণ যদিও আয়তকার, মূল মন্দিরটি বর্গাকার। মন্দিরের বহু প্রবেশপথের সবগুলোই অনিন্দ্যসুন্দরভাবে গড়ে তোলা, আর সবগুলোতেই বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। মন্দিরের উপরের অংশ তিন ধাপে উপরে ঊঠে গিয়েছে, যার চার কোণে সবমিলিয়ে আটটি ও উপরের ধাপে একটি- মোট নয়টি চূড়া আগে ছিল। তবে এখানে বলতেই হয়, মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী এতই চমকপ্রদ যে আমি এই চূড়ার কথা আগে না জানলে বুঝতামই না যে এখানে চূড়া থাকার কথা ছিলো। এই চূড়ার মতো নকশার এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ না থাকার পরেও মন্দিরের সৌন্দর্য একটুও কমে নি, কোন অপূর্ণতা নেই- এটাই মন্দিরের নকশার সার্থকতা। ১৫ হাজারের মতো পোড়ামাটির ফলকের মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে পৌরাণিক কাহিনীগুলো তুলে ধরা হয়েছে, আর সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে সৃজনশীলতা ও অপরূপ যত্নের বহিঃপ্রকাশ, যা মন্দিরের সৌন্দর্যকে নিয়ে গেছে এক অন্য মাত্রায়।
টেরাকোটা এমনি একটি জিনিস, যার সৌন্দর্য বুঝতে হলে আপনাদেরকে কাছে যেতেই হবে।

আমার এখানে ঘুরে আসতে বেশ ভালো লেগেছে, আপনারা ঘুরে আসলে আমি নিশ্চিত যে আপনাদেরও ভালো লাগবে।

_{Posted using SteemPro Mobile}