হাজার বছর ধরে উপন্যাসের বুক রিভিউ | 10% beneficiaries for @shy-fox
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বুক রিভিউ | হাজার বছর ধরে |
---|---|
লেখক | জহির রায়হান |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | সামাজিক উপন্যাস |
প্রকাশিত | অনুপম প্রকাশনী |
সাল | ১৯৯৮ |
মিডিয়ার ধরণ | মুদ্রিত গ্রন্থ |
পৃষ্ঠা | ৬৪ |
আই এস বিএন | ৯৭৮৯৮৪৪০৪৩৫৭২ |
মূল বক্তব্য
জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাস একটি কালজয়ী উপন্যাস। এই উপন্যাসে ফুটে উঠেছে পরী দিঘির পারে গ্রামের হাজার বছরের সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গড়ে ওঠা একটি পরিবারের, একটি গ্রামের সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে। আমাদের গ্রামের আবহমানকালের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন জহির রায়হান। হাজার বছর ধরে উপন্যাস এই গ্রামের গোড়াপত্তন কবে হয়েছে কেউ জানেনা। হাজার বছর আগে গোড়া পত্তন হওয়া গ্রামে বন্যায় ভেসে আসা কাশেম সিকদার কয়েক বিঘা জমি কিনে গড়ে তোলেন শিকদার বাড়ি ।এই সিকদার বাড়ি এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয় এই উপন্যাসটিতে কয়েকটি কেন্দ্রীয় চরিত্র আছে যেমন মকবুল বুড়ো , মন্টু মিয়া, ও টুনি। গনু মোল্লা, ফকিরের মা ও আম্বিয়া।
জীবনের হাটে সকল বেচাকেনা শেষ করে একদিন আকর্ষিক কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ওরা। ধীরে ধীরে রাত বাড়তে লাগল ,চাঁদ হেলে পড়ল পশ্চিম আকাশে, উঠানের ছায়াটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল। রাত বাড়ছে হাজার বছরের সেই পুরনো রাত।
শিকদার বাড়িতে বট গাছের মত নেতৃত্ব করে মকবুল মকবুল বুড়ো । তিনি তার তিন স্ত্রী নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারেননি বিভিন্ন সমস্যা এবং তার তিন বউয়ের মধ্যে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকত। তিন বউকে চালানোর মত সামর্থ্য মকবুল বুড়োর ছিলনা ,তাই তিনি তার বউদের দিয়ে ঘরের কাজ, জমিজমার কাজ করে নিতেন । তাদের ভিতর ছিল সবার ছোট এবং অল্প বয়সী যে ছিল চঞ্চল টুনি ।টুনির বয়স ছিল মাত্র ১৪। মকবুল কে সে সহ্য করতে পারত না কেননা মকবুল বুড়ো ছিল তার দাদুর বয়সে। টুনির খেলার সাথী ছিল তার সম্পর্কে দেবর মন্টু মিয়া। মধ্যরাতে তারা অন্যের পুকুরে মাছ ধরতে যেত দুপুরবেলায় সবার চোখ আড়াল করে তারা ফুল তুলতে যাই শাপলা ফুল। এইভাবে চলতে চলতে এদিকে টুনির মন্টুর প্রতি আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু মন্তুর মনে কিছুটা দোটানা রয়েছে যায় তাদের সম্পর্ক কখনোই সামাজিক স্বীকৃতি পাবে না। অন্যদিকে মন্টুর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় গ্রামের মেয়ে করিম শেখের বোন আম্বিয়ার সাথে । টুনি কখনোই মেনে নিতে পারে না তাই টুনি মকবুল বুড়োকে প্ররোচনা দিতে থাকে আম্বিয়াকে বিয়ে করার জন্য । তারপরেই সকলের জীবনে এক আকর্ষিক পরিবর্তন চলে আসে। হাজার বছর ধরে উপন্যাস এ বাংলার আবহমান জীবনের মধ্যে নানার আশা-নিরাশা ,প্রেম ,ভালোবাসার কথা বলা করা হয়েছে ।এখানে নারী নির্যাতন বাল্যবিবাহ ,বহুবিবাহ ,অন্ধকার দিক গুলো ফুটে উঠেছে। এই রকম অনেকগুলো বছর গড়িয়ে যায় হারিয়ে যায় উপন্যাসের বেশ কিছু চরিত্র ।গনি মোল্লা ফকিরের মা, মকবুল বুড়ো এমনকি টুনি নিজেও। টুনি যখন মন্টুর জীবন থেকে হারিয়ে যায় তখন মন্তুর জীবনে আসে আম্বিয়া। অনেক বছর পরে আবার সেই শিকদার বাড়িতে বসে মন্টু পুঁথি পাঠ করে। এই রকম ভাবেই গ্রামবাংলার হাজার বছর ধরে চলতে থাকে জীবন । শুধু পাল্টে যায় চরিত্রগুলো কিন্তু গ্রামীণ জীবন চলতে থাকে। এখানে কালের আবর্তে সময় গড়ায় প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে তবে শুধু পরিবর্তন আসে না অন্ধকার আমাদের কুসংস্কারচ্ছন্ন গ্রাম বাংলায় ।
শিক্ষা
এই উপন্যাস থেকে আমরা গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন জিনিস জানতে পারি। গ্রামের মানুষের জীবনধারা ,সামাজিক প্রেক্ষাপট, পারিবারিক জীবন এবং বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ থেকে শুরু করে একটি পরিবারের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো আমাদের অবগত করে। সমাজে বসবাস করতে হলে যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা এই উপন্যাসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে জহির রায়হান । উপন্যাস থেকে সামাজিক সকল অন্যায়, অবিচার ,অত্যাচার শেষে সবাই মিলে এক সাথে থাকা প্রাধান্য পেয়েছে।
ব্যক্তিগত মতামত
আমি যদি এই উপন্যাসের মতামত দিতে যাই তাহলে আমি বলব জহির রায়হানের যতগুলো সাহিত্যিক কাজ আছে হাজার বছর ধরে উপন্যাস তারমধ্যে অন্যতম ।তিনি উপন্যাসের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন এছাড়াও ওই সময় গ্রামের কলেরা ডায়রিয়াকে ওলাবিবি নামে ডাকা হতো অর্থাৎ ওলাবিবি যে গ্রামে যেতো সেই গ্রামের সকলকে উজার করে দিত । এছাড়াও তিনি মকবুল বুড়োর পরিবারের কাহিনী, নারী নির্যাতন তার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ,কঠিন অচলায়তন সমাজে যাই হোক নারী কোন অধিকার নাই, নারী হাতের পুতুল মাত্র ,পুরুষ থাকে যেমন চায় তেমন নাচায় ।নিজের ইচ্ছামত কাউকে বিয়ে করা এমন সমাজে অপরাধ ,গুরুতর অপরাধ, অন্ধকারে সমাজ আনাচে-কানাচে বাস করে কুসংস্কার এই বিষয়গুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের আবহমান গ্রামের সামাজিক চিত্র দেখেছি একটা ধারা ছিল আমাদের গ্রামে যারা মুরুব্বী ছিল তারা সব সময় বহুবিবাহ করত তার প্রতিনিধিত্ব করেছিল মকবুল বুড়ো। তিনি তার ঘরে বাহিরে জমিজমার সবগুলো কাজ করে নিতেন তার বউদের দিয়ে ।এটি ছিল নারী নির্যাতনের অন্যতম লক্ষণ । এছাড়াও টুনি যে ছিল মকবুলের সবথেকে ছোট বউ যার সমাজের বাঁধাধরা নিয়মগুলো মানতে পারছিল না এ ছাড়াও মকবুল বুড়ো তার দাদুর বয়সে হাওয়াই তার প্রতি কোনো আকর্ষণ কাজ করছিল না ।টুনি ভালবাসে তার সম্পর্কের দেবর মন্টুকে কিন্তু কালের পরিক্রমায় মন্টু কে বিয়ে করতে হয় করিম শেখের বোন আম্বিয়া কে । গ্রামটি পরি দিঘীরপাড় কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই পরিদিঘি নিয়ে নানা রুপকথা তুলে ধরা হয়েছে।
এই উপন্যাসটি আমাদের মাধ্যমিক লেভেলে পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাই আমি সংক্ষিপ্ত আকারে উপন্যাসের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৫/৫
উপন্যাসের পিডিএফ লিংক এখানে
উপন্যাস আশ্রিত মুভি লিংক এখানে
বুক রিভিউ | হাজার বছর ধরে |
---|---|
রিভিউ করেছেন | @abidatasnimora |
জহির রায়হানের ""হাজার বছর ধরে" উপন্যাস টি আমার অতি প্রিয় উপন্যাস। এখানে টুনি ও মন্টু মিয়ার প্রেমকে কেন্দ্র করে গ্রাম বাংলার বিশেষ বিশেষ রূপ উপনীত হয়েছে। উপন্যাসে মধ্যমণি মকবুল বুড়োর ছোট স্ত্রী টুনি।
একদম ঠিক ধরেছেন প্রেম কাহিনী ছিল অসাধারণ তাদের দুপুর বেলার শাপলা ফুল তুলতে যাওয়া রাত্রে বেলায় মাছ ধরতে যাব গ্রামবাংলায় অসাধারণ একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি আপনার মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লাগলো আমার।
হাজার বছর ধরে উপন্যাস টি আমার পড়া হয়নি।তবে এই উপন্যাসের উপর নির্মিত জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে মুভিটা আমি দেখেছি। যদি কেউ মুভিটা দেখে তাহলে উপন্যাসের সম্পূর্ণ ভাষা সে বুঝতে পারবে।বাংলার মানুষের সেই সাধারন জীবন গাঁথা সাধারণ চলাফেরা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি ধারায় বেঁচে থাকা।একটা ঐতিহ্য ছিল আমাদের।এই উপন্যাসে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র ছিল মন্টু মিয়া এবং টুনি বিবি।অনেক ভালো রিভিউ করেছেন উপন্যাসটার আপু। ধন্যবাদ
সত্যি বলছেন মুভিটি এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা কল্পনার বাহিরে গ্রাম বাংলার আবহাওয়া মান কালের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তুলেছে ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনি আমার পোস্ট পড়ে কিছু জানতে পেরেছেন শুনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপু আপনার আজকের রিভিউটি দেখে খুবই ভালো লাগলো। হাজার বছর ধরে উপন্যাসটি আমরা কলেজে পড়েছি। আপনার রিভিউটি পড়ে মনে হচ্ছিল যে কোন প্রশ্নের উত্তর পড়ছি।
উপন্যাসটির প্রতিটি বিষয় এত ভালোভাবে আমার পড়া যে আপনার রিভিউটি পড়ে ঐ মুহুর্তে চলে গিয়েছিলাম। আমি আগে বেশ কয়েকবার পড়েছি এমন লাগছিল। ধন্যবাদ আপু হাজার বছর ধরে উপন্যাস রিভিউ লেখার জন্য। আপনার রিভিউটি করে ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি কলেজ জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম।
ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আমি জানি এ বইটি সবাই পড়েছে অসাধারণ একটি বই ভালো লাগার মত একটি বই।
আমি যতগুলো গল্প পড়েছি তার মধ্যে জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে আমার খুব প্রিয় একটি গল্পের বই ছিল। এবং কি এই গল্পটা আমাদের পাঠ্যবইয়ের মধ্যেও ছিল। আমার পুরো হিস্ট্রি মনে আছে এবং আপনি অনেক সুন্দর করে আপনার রিভিউটি করেছেন। হাজার বছর ধরে এই উপন্যাসে একটি গ্রাম এবং কি গরিব দুঃখী যারা আছে তাদের চলাচল থেকে শুরু করে সবকিছু তুলে ধরেছিলেন জহির রায়হানের। গল্প সত্যিই অসাধারণ একটা ভুলার মত নয় আর যেহেতু এটা আমাদের পাঠ্যবইয়ে ছিল সেতু বুঝতে পারছেন যে কমবেশি সবকিছুই মনে আছে। বুড়ো মকবুল বউ মেরে কি একটা মহা বিপদে পড়েছিল। এই উপন্যাসটিতে ভালো-মন্দ সবকিছু তুলে ধরা হয়েছিল। জহির রায়হানের আমি আরো অনেক গল্প পড়েছি কিন্তু এটাই আমার কাছে সবচাইতে বেস্ট ছিল। আপনার ভিউটি অনেক সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু।
আপনার কমেন্ট পড়ে বুঝে গেছি আপনি অনেকবার এই বইটি পড়েছেন আমাদের মাধ্যমিক পাঠ্যবই এই উপন্যাসটি পঠিত ছিল ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্টু আর টুনির একসাথে না হওয়াতে আমার একটু মন খারাপ হয়েছে। এই বই পড়েছি আমি বহু বছর আগে।তবে বইটি পড়ার শুরু থেকেই ভেবেছিলাম মন্টু আর টুনির বিয়ে হবে। তবে শেষে এ এসে দেখি সব পালটে গেলো।
বইটি আমার অনেক বেশি পছন্দের।
পরে মন্টু আম্বিয়া কে বিয়ে করে সুখে দিন যাপন করে কিন্তু মকবুল বুড়ো মারা যাওয়ার পর টুনির জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়।
আমি জহির রায়হানের "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসের মুভিটি আমি দুইবার দেখেছি।খুবই ভালো লাগে।তাছাড়া গ্রাম বাংলার ভাষা,সংস্কৃতি রূপকথার পরি ও নানা কুসংস্কার এর কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই উপন্যাসের মাধ্যমে।রিয়াজ খুবই ভালো অভিনয় করেছিলেন এই মুভিতে।আপনি খুবই সুন্দর ভাবে রিভিউ দিয়েছেন।ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ আপু আপনি ছবিটি দেখেছেন সত্যি অনেক ভালো লাগার মত একটা মুভি।
You have been upvoted by @abuahmad, a Country Representative of Bangladesh. We are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the quality contents on steemit.
Follow @steemitblog for all the latest update and
Keep creating qualityful contents on Steemit!
জহির রায়হানের এই হাজার বছর ধরে উপন্যাস টি খুব ফেমাস একটি উপন্যাস।
আমরা উপন্যাসটি কলেজ লেভেলে পড়েছি বাংলা বইতে।
বাংলাদেশ একটা মুভি আছে হাজার বছর ধরে সেখানে রিয়াজ অভিনীয় করেছেন, এটি এম শামসুজ্জামান ছিলেন মুভিটাও অনেক ভালো।
আপনি খুব সুন্দর রিভিও দিয়েছেন।