সংসার সন্তান আর স্বপ্নের পরীক্ষা
আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা আজ আমি শেয়ার করতে চাই আমার জীবনে একটি বাস্তব ও হৃদয় স্পর্শী গল্প যার প্রতিটি অধ্যায়ে মিশে আছে এক মায়ের দায়িত্ব, এক শিক্ষার্থীর লড়াই এবং এক নারী নিজেকে গড়ে তোলার নীরব অথচ কঠিন সংগ্রাম। গতকাল আমার ছিল পরীক্ষা রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় পত্র।ভেবেছিলাম অন্য দিনের মতো কোন ঝামেলা হবে না সকালে উঠেই পড়ে নেব প্রস্তুতি নেব তারপর কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেব।
কিন্তু বাস্তবতা কখনো কখনো আমাদের পরিকল্পনাকে উলটপালট করে দেয়। পরীক্ষার আগের দিন রাতেই আমার ছোট্ট মেয়েটা ঘুমাতে চাইছিল না। এদিকে আমার হাজবেন্ড ও কাজে ব্যস্ত ছিল তাই সবকিছু সামলানোর দায়িত্ব পুরোপুরি আমার ঘাড়ে। মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে রাত হয়ে যায় পড়াশোনা তখনও বাকি। ক্লান্ত চোখ নিয়ে কিছুটা পড়ে নেই ঠিকই কিন্তু মন বসে না। মনে হচ্ছিল মাথাটা কাজ করছে না ঘুমের টান তীব্র হচ্ছিল। তবুও ভেতরে এক অদম্য ইচ্ছা শক্তি কাজ করছিল, না আমাকে পারতেই হবে। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙলো খুব ভোরে। মাথায় তখন একটাই চিন্তা আজকের পরীক্ষা।
কিন্তু তখনই আমার বাস্তব দায়িত্ব গুলো যেন আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল আমি শুধু একজন ছাত্রী নই, একজন স্ত্রী, একজন মা, একজন গৃহিনী। রান্নাবান্না করা উঠান ঝাড়ু দেওয়া মেয়েকে গোসল করানো খাওয়ানো আরো অনেক কাজ সবকিছু এক হাতে সামাল দিতে হলো। সব কাজ সামলে যখন একটু বই নিয়ে বসি তখনই শুরু হয় নতুন এক যুদ্ধ।। আমার দুই বছরের মেয়েটা বই দেখলেই কেমন যেন রেগে যায়। বইটা কেড়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয়। পাশে বসে আবার আঁকা আকি করতে চায় কখনো কলম ছুড়ে ফেলে কখনো আমার কোলে উঠে বসে চোখে মুখে হাত রেখে বলে আম্মু পড়ো না আমার সাথে খেলা করো।
সেই একটাই সময় যখন ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকায়, যেন আমি ওর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী শুধুমাত্র পড়াশোনার কারণে। তবুও আমি নিরুত্তর পড়ার ভান করি মাঝেমধ্যে চুপি চুপি চোখের পানি ফেলে দেই কারণ নিজের স্বপ্নগুলোকে চাপা দিতে পারি না। আমি জানি পড়াশোনা করেই একদিন আমার জীবনের মানচিত্র বদলে যাবে। যথাসময়ে তৈরি হয়ে পরীক্ষার জন্য রওনা হই। মেয়েটা তখন কান্না শুরু করে দেয় আম্মু যেও না।
বুকটা কেঁপে ওঠে। ওর মুখটা মনে রেখে চোখের পানি চেপে রেখে বের হই। রিকশায় বসে বইটা আবার খুলি যতটুকু পারি মনে রাখার চেষ্টা করি। কেন্দ্রে পৌঁছে দেখি চারপাশে সবাই নিজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ফাইনাল রিভিশন দিচ্ছে কেউ সারদের খুঁজছে। চুপচাপ একটা কোণে বসে চোখ বন্ধ করে নিলাম। মনে মনে দোয়া করলাম হে আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও। আমার পড়া মাথায় ধরে রাখার ক্ষমতা দাও। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই আমি অবাক। প্রায় সব প্রশ্নই আমার পড়া অংশ থেকে এসেছে। মনে হচ্ছিল আল্লাহ যেন আমার কষ্টের প্রতিদান দিয়েছেন। কলম হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করলাম।
ঘামছি মন ছুটছে বারবার বাসায় মেয়েটা ঠিক আছে তো। কিন্তু হাত থামাইনি লিখেই গেছি। পরীক্ষা শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দরজা খুলতেই মেয়েটা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল আম্মু চলে এসেছো? এই ভালোবাসা প্রশান্তি আর সার্থকতার অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এইভাবে আমি সংসারের কাজ মাতৃত্বের দায়িত্ব আর শিক্ষা জীবনে লড়াই সব একসাথে করে যাচ্ছি। হয়তো আমার গন্তব্য এখনো অনেক দূরে কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপে আমি নিজেকে গড়ে তুলছি।
জীবনের এই যাত্রাটা সহজ না কিন্তু অসম্ভব ও না। একটা নারী যদি চায় তবে সে তার সংসারও সামলাতে পারে নিজের স্বপ্নকেউ বাস্তবে পরিণত করতে পারে। শুধু দরকার আত্মবিশ্বাস ইচ্ছাশক্তি আর আল্লাহর উপর ভরসা। আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দায়িত্ব অনেক সময়ই বিশেষ করে আমাদের দেশের বিবাহিত মেয়েদের স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমার কাছে খুব খারাপ লাগে এটা দেখে যে ,এখনো আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেনা ,বাবা -মা বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পরে লাগে।
অথচ বিয়েটাই জীবনের সবকিছু না। আর এমনও না যে কিছুদিন পরে বিয়ে হলে সব কিছু উলোট-পালট হয়ে যাবে। যদিও জানি আমার এই কথার সাথে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন। কিন্তু এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত।
আপনার মেয়ের কথা পড়ে বেচারির জন্য খারাপ লাগলো। তারপর বলবো আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এগিয়ে যানা। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।